যুক্তরাষ্ট্রকে মার্কিন বলার কারণ কী?

আমেরিকা মহাদেশের নাম হয়েছে আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারে। তিনি সর্বপ্রথম আমেরিকার ভূখণ্ডের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করেন। কলম্বাসকে আমেরিকা আবিষ্কারক বলা হলেও তিনি একবারও উত্তর আমেরিকার মাটিতে পা রাখেননি। সোনা-রুপার খোঁজে ঘোরাফেরা করেছেন ক্যারিবিয়ান হিস্পানিওয়ালায় এলাকায় কয়েকটি দ্বীপে এখন যার নাম হাইতি ও ডোমিনিকান রিপাবলিক ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃটিশ কলোনিয়াল যুগে নাম ছিল ‘ইউনাইটেড কলোনিজ অব আমেরিকা’, ব্রিটিশদের পরাজিত করে ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা লাভ করলে নাম রাখা হয় ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা। এককালের ব্রিটিশ কলোনি এখন ব্রিটিশদের মুরব্বির ভূমিকা পালন করছে; একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে একমাত্র সুপার পাওয়ার।

শুধুমাত্র আমেরিকা নামটা লিখলে বা উচ্চারণ করলে সাধারণত একমেবাদ্বিতীয়ম যুক্তরাষ্ট্রকেই বুঝায়। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় অন্যান্য যে ৩৪ টি দেশ রয়েছে তাদের কেউ তেমন আমলে নিতে চায় না।

আমেরিকার বিশেষণ ‘আমেরিকান’, যেমন আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান টিভি সিরিজ, আমেরিকান ইংলিশ। ‌ কালক্রমে সে আমেরিকান শব্দটিই বিকৃত হয়ে এদেশে ‘মেরিকান’ এবং পরিশেষে ‘মার্কিন’ হিসেবে জনগণের ভাষায় ঢুকে পড়ে। নতুন শব্দটির জন্মের দিনক্ষণ কেউ লিখে রাখেনি। লিখবে কেমন করে? পরিবর্তন এসেছে ধীর লয়ে।

বাংলা মুলুকে মার্কিন নামটি চালু হয় ব্রিটিশ আমলে। এক সময়ে আমেরিকা থেকে আমদানি করা সস্তায় কাপড়ে এদেশ সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। মার্কিন কাপড় শত ভাগ তুলার ধূসর রঙের কাপড়। রংটং করে দরিদ্র মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ, মশারির লাইনিং, ব্যাগ, বাস্কেট, প্যাকিং ইত্যাদি কাজে ব্যবহার হত;

এখনো হয়। এখনো কাপড়ের দোকানে সস্তায় দেশে তৈরি মার্কিন কাপড় পাওয়া যায়।

মার্কিন কাপড়
মার্কিন কাপড়

মার্কিন কাপড়ের বেশির ভাগ ক্রেতা গ্রামে গঞ্জের সাধারণ মানুষ। তাদের ‌অনভ্যস্ত কানে আমেরিকান‌ শব্দটি শোনাতো মেরিকান। আমেরিকান কাপড় ক্রমান্বয়ে পরিণত হয় মেরিকান কাপড়ে এবং পরিশেষে ‘মার্কিন কাপড়’ নাম নেয়। কাপড়ের নাম থেকে দেশটার নামও মার্কিন নামে পরিচিত হয়ে আলাপ-আলোচনায় ও বই পত্রে ঢুকে পড়ে। একই ভাবে ইংল্যান্ডের অধিবাসীরা ইংরেজ কখনো‌ বা ফিরিঙ্গি, ফ্রান্সের লোকজন ফরাসি এবং হল্যান্ডের অধিবাসীরা ওলন্দাজ নামে বাংলা ভাষায় স্থান করে নেয়।

খোদ আমেরিকাতেই আমেরিকানরা শব্দটি পুরোপুরি বলতে চায় না। অনেককেই বলতে শুনেছি ‘mrika. আরব মুলুকেও একই নামে দেশটি পরিচিত ‘Mrika’ (أمريكا)। বাংলাদেশের মতো পশ্চিম বাংলায় এবং ভারতের কয়েকটি এলাকায় মার্কিন শব্দটি প্রচলিত আছে।‌হিন্দি ভাষায় একটু ভিন্ন উচ্চারণে Amerika (अमेरिका), উত্তর ভারতে কোন কোন অঞ্চলে আমরিকা Umrika. তামিল ভাষায় আমেরিক্কা (Amerikka)। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই বলে আমেরিকানা (Americana), কোথাও আমেরিকানো। কোরিয়ায় আমেলিকানা (amelikana)। আফ্রিকার সোহালি ভাষায় মারেকানি (Marekani) আমাদের মার্কিন শব্দের কাছাকাছি।

Source:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here