আমেরিকার ব্রিটেন শাসনের ইতিহাসঃ
আমেরিকাকে ব্রিটেন শাসন করেছে সেটা ১০০% ভাগ সত্য কিন্তু ব্রিটেন বা ব্রিটিশরা কাদের শাসন করেছে? উত্তর হবে ব্রিটিশরা আমেরিকাতে মাইগ্রেট করা ব্রিটিশদেরই শাসন করেছে।
আজকে আমরা যাদের আমেরিকান বলে চিনি তারা আসলে আমেরিকার প্রকৃত আদিবাসী নয়। তারা সবাই ব্রিটেন, ফ্রান্স,স্পেন হতে একটি সময় আমেরিকাতে বসতি স্থাপন করেছিল।
আমেরিকার প্রকৃত অধিবাসী ছিল রেড ইন্ডিয়ান (red Indian) তাদের নেটিভ আমেরিকানও বলা হয়। তাদেরকে এখনও আমেরিকায় কেবল চেহারা দেখে আলাদা করা যায় এবং এরাই আমেরিকার আসল উত্তরাধিকারী।
>>> ১৪৯৩ সালের নভেম্বরের ১৯ তারিখের দিকে নাবিক কলাম্বাসের আমেরিকা (USA) আবিষ্কারের এরপরই ইউরোপ থেকে সাদা চামড়ার ইউরোপীয়দের আমেরিকায় মহাদেশে মাইগ্রেশন করা শুরু হয়। একই সাথে শুরু হয় আমেরিকার বিভিন্ন জায়গা বিভিন্ন দেশ দখল করে উপনিবেশ স্থাপন করা।
আমেরিকায় বিভিন্ন উপনিবেশিক কলোনি গঠনে যে দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরী হয়েছিল। তারা হল (১) ব্রিটেন ;(২) ফ্রান্স ; (৩) স্পেন; (৪) পর্তুগাল।
>>> তবে এদের সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফলভাবে উপনিবেশ স্থাপন করতে পেরেছিল ব্রিটেন/ব্রিটিশরা। সারা আমেরিকায় ব্রিটেন থেকে জাহাজের মাধ্যমে লোক এসে নিজেদের কলোনি গড়ে তুলেছিল।
পরবর্তীতে সারা আমেরিকায় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কলোনির সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে আমেরিকায় বিট্রেন,ফ্রান্সের মধ্যে জায়গা দখল নিয়ে যুদ্ধ লেগে যায় এবং ব্রিটিশরা ফ্রান্সকে হারাতে সক্ষম হয়।
আর এরপর আমেরিকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে বসতিস্থাপন করা ব্রিটিশদের সংঘর্ষ হয় এবং এভাবেই ব্রিটিশ জনগণ যারা ব্রিটেন থেকে আমেরিকায় ব্যবসা করতে, নির্বাসনে, পালিয়ে এসে আমেরিকায় বসতি স্থাপন করেছিল তারাই আমেরিকার মালিক বনে যান।
মাইগ্রেশন পলিসিঃ
আগেই যেহেতু বলেছি যে আমেরিকানরা সবাই মূলত ইউরোপ থেকে মাইগ্রেড করে আমেরিকায় গিয়ে বসতিস্থাপন করেছিল। তাই সেখানে কখনও সেভাবে একক উগ্র আমেরিকান জাতি এমন কিছুর সৃষ্টি হয়নি। আমেরিকা সর্বদাই মাইগ্রেশনের ব্যাপারে উদার নীতি ফলো করেছে। কিন্তু এখানে আমেরিকা একটি কাজ করেছে যে আপনি যদি কোন প্রতিভাবান ব্যক্তি হন বা এমন কেউ যা আমেরিকার কাজে আসবে তাহলে আমেরিকা তাকে দেশে বসবাসের অনুমতি দেয়।
লোকটি মুসলিম হোক কিংবা কট্টর কোন দেশের নাগরিক আপনার যদি কোন প্রতিভা থাকে তবে আপনাকে তারা তাদের দেশে নিয়ে নিবে।
বা আপনি যদি এমন কেউ হন যাকে আমেরিকা তার নিজের দেশের বিরোধে ব্যবহার করতে পারবে তবে আমেরিকা আশ্রয় দিবে।
আমেরিকা এমন করে বিশ্বের অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তিদেরকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে এসেছে। নিজের দেশকে প্রতিভাবান ব্যক্তিদের দেশে পরিনত করেছে।
দেখতে পারেনঃ America’s Great Migrations
আমেরিকার প্রযুক্তিগত জ্ঞান স্থানান্তরঃ
যেহেতু কলোনিয়াল আমেরিকানরা মূলত ব্রিটেনের একসময় বসবাসকারী লোক। তাই ব্রিটেনের কখনই আমেরিকায় লুটপাট চালানোর প্রশ্ন উঠে নি।
আমেরিকা শাসনের সময় সেখানে সার্বিক উন্নতির জন্য ব্রিটেন সেখানে প্রথম থেকেই তৈরী করেছে স্কুল,কলেজ, অস্ত্রাগার, উন্নত শেয়ার বাজার মার্কেট একটি আদর্শিক দেশ গঠনে যা যা দরকার সবই করেছিল তারা। আমেরিকায় তৈরী হয়েছিল উন্নত নৌ-বন্দর।প্রযুক্তি স্থানান্তরে কখন ব্রিটেনের মনে হয় নি যে তারা অন্য কোন দেশে বা জাতিকে এসব স্থানান্তর করছে। ব্রিটেনের অধীনে আমেরিকায় শুরু থেকেই শিল্পায়ন, বিভিন বিশাল বিশাল ফার্ম হাউজ তৈরী করেছিল। কারণ আমেরিকায় উপযুক্ত জমির তো আর অভাব ছিল না। স্বাধীনতার পর আমেরিকায় আমেরিকানরা আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের(Red indian) জোড় করে জমি অধিগ্রহণ করেছিল।
ব্রিটিশরা যখন ব্রিটিশ ভারতে স্কুল গড়ে তুলেছিল তখন তারা এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে এই কাজ করে নি। এদেশে তাদের প্রশাসনিক কাজ চালাবার জন্য তাদের ধারার শিক্ষিত লোকের দরকার ছিল। তাই তারা এদেশে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ছিল।
এদেশে তারা রেল ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল ব্রিটিশ ভারত থেকে সম্পদ লুটপাট করে তাদের দেশে নিয়ে যেতে ব্রিটিশ ভারতের উন্নতি তাদের মূল লক্ষ্য ছিল না।
কিন্তু আমেরিকার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন ছিল না।
আমেরিকায় গোল্ড ও আকরিকের খনিঃ
>> আমেরিকা স্বাধীন হবার সময় আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা ব্রিটিশ ভারতের মত ছিল না। আমেরিকার গৃহযুদ্ধে খরচ বাদ দিলে আমেরিকার সেভাবে অতি দরিদ্র রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয় নি। কিন্তু
আমেরিকার দেশ হিসেবে স্বাধীন হবার পর পরই আমেরিকাতে ১৭৯৯ সালে মনটানাতে স্বর্ণের খণি খুজে পাওয়া যায়। এছাড়া পরবর্তীতে আমেরিকা বিভিন্ন বহুল মূল্যবান আকরিকের খণিরও সন্ধান মিলে। যা আমেরিকাকে ধনী করে দেয়। আমরা সবাই জানি যে একটা সময় কার কাছে কত স্বর্ণের রিজার্ভ আছে সেটা নির্ধারণ করে দিত যে সেই দেশ কত ধনী।
>> ১৮৬৭ সালের ১৮ অক্টোবর আমেরিকা(USA) রাশিয়ার রাজার কাছ থেকে ১,৫১৮,৮০০ বর্গ কি.মি (প্রায়) আলাস্কা(বাংলাদেশের থেকেও বড়)৭.২ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয়। যেটিতে পরে স্বর্ণের খণির সন্ধান পাওয়া যায়। কপার,জিংকের বিশাল খণির সন্ধানও পাওয়া যায়। কেবল ২০১৮ সালে আলাস্কা থেকে ১.৭ বিলিয়ন ডলার এক্সপার্ট করে আমেরিকা । ২০১৯ সালে কেবল আলাস্কার লোকাল সরকার ৩৬ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার আয় করে খণি হতে ।
আমেরিকার বিশাল আয়তন ও ভৌগোলিক অবস্থানঃ
আমেরিকা দেশের অবস্থান এতটাই ভাল যে এই দেশের দুই পাশে বিশাল মহাসাগর । দুই পাশে ধারে কাছেও এমন কোন শক্তিশালী দেশ নেই যেখান থেকে আমেরিকাতে এসে আক্রমণ চালানো সহজ। এই দুই পাশের মহাসাগর আমেরিকাকে অন্য দেশ হতে সুরক্ষা দিয়ে এসেছে।
বিশাল সাগর সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা থেকে আমেরিকার বিশাল নেভির জন্ম যা একে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। একসময় ব্রিটেনের চারপাশে সমুদ্র থাকায়। প্রয়োজনীয়তার তাগিদ থেকে তাদেরও শক্তিশালী নৌবাহিনীর একইভাবে জন্ম নিয়েছিল এবং তারাও বিশ্ব দখলে বেরিয়েছিল ।
বিশাল আয়তনের এই দেশে(USA) জনসংখ্যার সঠিক বন্টন আমেরিকার শক্তি । আমেরিকার কিন্তু আজকের এই বিশাল অঞ্চলের অধিকারী ছিল না। আমেরিকা মেক্সিকোর প্রায় ৩ ভাগের ১ ভাগ ১৮৪৬ -১৮৪৮ যুদ্ধের মাধ্যমে দখল করে আজকের বিশাল আমেরিকায় পরিনত হয়েছে ।
২য় বিশ্বযুদ্ধঃ
১ম কিংবা ২য় বিশ্ব যুদ্ধ কোনটাই হয়নি আমেরিকার দাড়ে কাছে। এসব যুদ্ধের সাথে আমেরিকা জড়িত ছিল না। ইউরোপের দেশগুলো যখন যুদ্ধে করে শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন আমেরিকা বাইরে থেকে যুদ্ধের মোড় বুজার চেষ্টা করছে। এরই প্রেক্ষিতে ফ্রান্স ও ব্রিটেন উভয়ই আমেরিকাকে বিমান তৈরী করবার অর্ডার দেয় আর আমেরিকা তাদের জন্য বিমান তৈরী সহ যুদ্ধের অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরী করে প্রচুর অর্থ ও সামরিক প্রযুক্তি আয়ত্ত করে । যুদ্ধের শেষ দিকে আমেরিকা যুদ্ধে যোগদান করে এবং বিজয়ী হয়।
যুদ্ধে জয়ী হবার পর দেখা যায় যে ব্রিটেন,ফ্রান্স,জার্মানি, রাশিয়াসহ কোন দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। যুদ্ধে সকল পরাশক্তি একে অপরকে ক্ষতি করে অর্থনৈতিক ভাবে কাঙ্গাল হয়ে গেছে।
এসময় কেবল একটি দেশ ছিল যার অর্থনীতি ছিল স্থিতিশীল সেটি হল আমেরিকা।
২য় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার কোথাও কোন যুদ্ধ হয় নি। কেউ আমেরিকায় যুদ্ধ করতেও যায় নি। ফলে আমেরিকার যুদ্ধে তেমন কোন ক্ষতি হয় নি।
যুদ্ধের একটি সময় ফ্রান্স ও ব্রিটেন নিজেরদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের ব্যাংকের একটি বিশাল অর্থ আমেরিকায় স্থানান্তর করে দেয় কারণ জার্মানরা তাদের ব্যাংকগুলোতে হামলা ও শহর দখল করে ব্যাংকও লুট করতে পারে।
যুদ্ধ শেষে ফ্রান্স ও ব্রিটেন তার গচ্ছিত সম্পদ ফেরত চাইলে আমেরিকা লজ্জাজনকভাবে এটা দিতে অস্বীকার করে এবং ইউরোপের পরাশক্তিগুলোকে আমেরিকার ব্যাংক মুখী করে দেয়।
সৌদির সাথে ডলার চুক্তিঃ
সৌদির সাথে আমেরিকা ১৯৭০ সালের দিকে একটি চুক্তিস্থাপন করে। যেই চুক্তি অনুযায়ী সৌদি তার বিশাল তেল,পেট্রোলিয়াম বিশ্বের অন্য দেশকে বিক্রি করবে ডলারের বিনিময়ে । অর্থাৎ পৃথিবীর কোন দেশ সৌদি থেকে এসব কিনতে হলে তাকে আমেরিকান ডলার দিয়ে কিনতে হবে। বিনিময়ে আমেরিকা সৌদিকে সুরুক্ষা দিবে সৌদিতে আমেরিকান ঘাটি স্থাপন করে ।
এই চুক্তির পর আমেরিকাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। আমেরিকা কেবল টাকা ছাপিয়েছে এবং সেটা বিশ্বকে বিক্রি করেছে। এটি আমেরিকান ডলারকে যেমন করেছে শক্তিশালী তেমনি অর্থনীতিকে এমন শক্তিশালী জায়গাতে নিয়ে দাড় করিয়েছে যে সেটা আপনাকে আলাদা করে বুজাতে হবে না।
বিস্তারিতঃ How Petrodollars Affect the U.S. Dollar