ইউ এস টুরিষ্ট ভিসা আবেদনের পূর্বে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি।

ভিসা আবেদনের জন্য বেসিক কিছু ধারনা।

একজন নামকরা লিখকের একটি বইএর কাভার পেইজে লিখা ছিল”বিজয়ীরা ভিন্ন ধরনের কাজ করেনা তারা একই কাজ ভিন্ন ভাবে করে।আমেরিকার ভিজিট ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে লিখকের কথাটির যথেষ্ট গুরূত্ব রয়েছে।
আমেরিকা,কানাডা-অষ্টেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-জাপান-সাউথ কোরিয়ার মতো দেশে বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি বা ভিসা পেতে কিছু দেশের ট্যুরিস্টদের জন্য খুব ইজি হলেও আমাদের দেশের ব্যাপারে তাদের রিকয়েরমেন্টগুলো অটল। আপনি শুধুমাত্র দুই তিনটা দেশ পূর্বে ঘুরলেই ভিসা পাবেন এটা মোটেও সত্য নয়।
উন্নত দেশগুলোতে ভিসা পাওয়ার প্রধান শর্ত আপনাকে তাদের নিকট ডকুমেন্টসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, আপনি বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে অনেক ভালো আছেন আর আপনি একজন সত্যিই ট্যুরিস্ট এবং ট্যুর শেষে অবশ্যই যথা সময়ে দেশে ফিরবেন। এই প্রমাণ তারা ঠিকমত না পেলে কোনোদিনও আপনি ভিসা পাবেন না।
কিভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে আপনি দেশে ফিরে আসবেন এবং এই প্রমাণের জন্য এ্যম্বাসি একজন ট্যুরিস্টের কোন কোন দিক খুব গুরুত্ব দেয় তার কিছু বেসিক দিক আলোচনা করলে লিখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। আপনার মার্কিন ভিসার আবেদন শুরু করার জন্য আপনাকে প্রথম পদক্ষেপটি নিতে হবে তা হল আপনি কোন ধরনের ভিসার অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন।
আপনি যে মার্কিন ভিসাটির জন্য আবেদন করতে চান তা নির্বাচন করার পরে, প্রয়োজনীয়তাগুলি পরীক্ষা করুন এবং সেই ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলি সংগ্রহ করা শুরু করুন৷

তাই কিছুটা ধারনা দিচ্ছি।
♣ আপনাকে ভালো বেতনের চাকুরীজীবী অথবা ভাল আয়ের ব্যবসায়ী হতে হবে।
♣ চাকুরীজীবীর ক্ষেত্রে অফিস থেকে অফিসের প্যাডে NOC এবং Salary Certificate জমা দিতে হবে।
♣ ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে আপডেট ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং মাসিক আয় দেখাতে হবে।
♣ চাকুরীজীবীর ব্যাংক Salary Account থাকতে হবে এবং ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
♣ আপনার মাসিক আয়ের সাথে ব্যয় এবং ব্যাংকে অবশিষ্ট সেভিংসের একটা মিল থাকতে হবে।
♣ আলাদা একাধিক ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট দেখানো যেতে পারে।
♣ ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর একটা ধারাবাহিকতা থাকতে হবে দুই দিনের মধ্যে লাখ লাখ টাকা জমা দিলে হবেনা।
এতে তারা একাউন্ট সাজানো মনে করেন এবং ভাবেন আপনি যে কারো কাছে টাকা ধার করে ভিসার জন্য জমা দিয়েছেন।
♣ TIN সার্টিফিকেট থাকতে হবে। ট্যাক্স রিটার্ন এক ডকুমেন্ট থাকতে হবে।
♣ দীর্ঘদিনের FDR অথবা সঞ্চয়পত্র থাকতে হবে (ভিসার জন্য নতুন করলে হবেনা)।
♣ যেকোন সম্পদ যেমন নিজের নামে জমি বা ফ্লাটের দলিল অধিক গ্রহণযোগ্য।
♣ বছরে এক অথবা দুইবার বিদেশ ভ্রমণ থাকা ভাল ভিসার জন্য ১০ দিনের মধ্যে তিনটা দেশ ঘুরলে হবে না তাহলে এটি সাজানো মনে হবে।
♣ বিবাহিতদের জন্য ভিসা পাওয়া অগ্রধিকার থাকে কিন্তুু সেক্ষেত্রে আপনার আয়ের সোর্স টাও ষ্টং হতে হবে। এছাড়াও স্বামী স্ত্রী উভয়কেই একসাথে একই সময়ে পূর্বে বিদেশ ভ্রমণের প্রমাণ থাকতে হবে।
♣ শুধুমাত্র ঘুরার উদ্দেশ্য নিয়ে নয় বরং বিভিন্ন অকেশনের উদ্দেশ্য হাইলাইট করা ভিসার জন্য ভাল।
♣ ইনভাইটেশন অথবা হোটেল বুকিং থাকতে হবে আবার অনেক ক্ষেত্রে ইনভাইটেশন জরুরী ( ইনভাইটেশন লেটার টি দূতাবাস বা কতৃপক্ষের অফিসিয়াল নিয়ম অনুযায়ী ইসুকৃত হতে হবে হবে।
(এই লিংক টিতে কিভাবে ভ্রমন ভিসার ইনভাইটেশন হবে তা জানতে পারবেন।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=174674394673349&id=100063923671115
♣ ইউ এস এ্যাম্বাসি ভিসার জন্য ইন্টার্ভিউ নিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্মার্টের সাথে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তবে ওভার স্মার্ট হওয়া ভাল নয়।
তাদের প্রথম প্রশ্নই থাকবে আপনি কেন যেতে চান। এই ব্যাপারে সঠিক এবং গুরুত্বপূর্ণ উত্তর দিতে হবে। শুধু বেড়াতে বা ঘুরতে যেতে চান তা না হয়ে কোন কারণ তুলে ধরতে পারেন।

দূতাবাসের একটি সাধারণ ও কমন একটি প্রশ্নের উত্তর ৯০% ভিসা আবেদনকারী সঠিকভাবে দিতে পারে না। প্রশ্ন টি হলো আপনি কি করেন?

এর মেইন কারন হচ্ছে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সবাই একই উত্তর দিয়ে থাকে যে আমি ব্যবসা করি। একবার ভাবুনতো পাড়ার মোড়ের পন দোকানের মালিক বলে আমি ব্যবসা করি আর একটি বড় গ্রুপঅব কোম্পানির মালিকও একই কথা বলে। পাড়ার দোকানের মালিক যেই রং এর লাইসেন্স দেখায় বড় একজন ব্যবসায়ীও একই ডকুমেন্টস দেখায়।এই ভকুমেন্ট উপস্হাপন কৌশলটিই হচ্ছে।প্রধান বিষয়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো আপনি যে পেশায় জড়িত থাকেননা কেন আপনাকে প্রমান করতে হবে আপনি সেই পেশায় সত্যিই একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এবং গুরুত্ব প্রমাণের সাপোর্টিং ডকুমেন্টস।
সর্বপরি আপনার ভিসা প্রদানের জন্য একটি যোক্তিক কারন দেখাতে হবে।

মার্কিন ভিসার জন্য আবেদন করার সময় আপনাকে যা করতে হবে

1. চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ

a. আপনি যদি স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ভিসার জন্য আবেদন করেন, তাহলে কনস্যুলার অফিসার আপনার কাছ থেকে এই অতিরিক্ত নথিগুলির প্রয়োজন হবে:

b. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনার চিকিত্সার প্রয়োজনের কারণ এবং কেন আপনি আপনার দেশে এটি গ্রহণ করতে পারবেন না তা ব্যাখ্যা করে একজন স্থানীয় ডাক্তারের কাছ থেকে মেডিকেল ডায়াগনসিস।

c. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মেডিকেল সুবিধার চিঠি যা নিশ্চিত করে যে তারা আপনার অসুস্থতার চিকিৎসা করতে সক্ষম। চিঠিতে পদ্ধতির খরচ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

d. খরচ কভার করার জন্য জীবিকা নির্বাহের উপায়ের প্রমাণ – যেমন পরিবহন, এবং চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার খরচ।

2. স্টাডি ভিসা

আপনি যদি একজন ইউএস স্টুডেন্ট এবং এক্সচেঞ্জ ভিসার জন্য আবেদন করেন, তাহলে কনস্যুলার অফিসার আপনাকে প্রমাণ জমা দিতে হবে যে আপনি একটি মার্কিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের (এসইভিপি) অধীনে থাকতে হবে। আপনাকে সাধারণ ভিসা ফি বাদ দিয়ে SEVIS I-901 ফিও দিতে হবে এবং সাক্ষাত্কারের সময় অর্থপ্রদানের প্রমাণ জমা দিতে হবে।

3. কাজের ভিসা

আপনি যে ইউএস ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করেন তার উপর নির্ভর করে, আপনাকে নিম্নলিখিত নথির কিছু জমা দিতে হতে পারে:

a. আপনার যোগ্যতা পূরণের প্রমাণ (ডিপ্লোমা এবং সার্টিফিকেশন)

b. পেশাদার ডিগ্রির প্রমাণ (স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডক্টরেট)

c. একটি মার্কিন নিয়োগকর্তা দ্বারা কাজের প্রস্তাব

d. জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি

e. পূর্ববর্তী নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে চিঠি

f. রাষ্ট্রীয় লাইসেন্স (যদি প্রযোজ্য হয়)

g. আপনার অসাধারণ ক্ষমতা আছে তার প্রমাণ

h. অতিরিক্ত ফি, ইত্যাদি

এটি মার্কিন ভিসার জন্য কীভাবে আবেদন করতে হয় তার একটি সংক্ষিপ্ত নির্দেশিকা। আমি আসা করি এটা সাহায্য করবে.

আমি উপরে শুধুমাত্র কিছু বেসিক বিষয় বা ডকুমেন্টের কথা লিখেছি এছাড়া বিভিন্ন দেশের জন্য নিজস্ব বিভিন্ন ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনি যে দেশেরই ভিসা করুন না কেন সেই দেশের ওয়েভ সাইট ভিজিট করে তাদের চেকলিস্ট সংগ্রহ করুন এবং সেই অনুযায়ী সকল ডকুমেন্ট জমা দিন। আর মনে রাখবেন আপনার যেকোন বাংলা ডকুমেন্টস অবশ্যই ইংরেজীতে অনুবাদসহ তা নোটারী করে জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখুন আপনার ডকুমেন্টস যেন ঝকঝকে এবং ডিসিপ্লিন থাকে। অস্পষ্ট এবং অগোছালো কাগজ তাদের কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে।

এমনভাবে ডকুমেন্টসগুলো জমা দিবেন যাতে তারা হাতে নিয়ে খুব সহজে সব বুঝতে পারেন। এছাড়া আপনার জমাকৃত সকল তথ্য অবশ্যই সত্য হতে হবে যাতে তারা অনুসন্ধান করলে যেন সঠিক তথ্য পায়। নিজেকে ভিসা পাওয়ার যোগ্য করে আবেদন জমা দিবেন নতুবা অযথা রিফিউজ হয়ে আপনার পাসপোর্টকে নষ্ট করবেন না। কারণ কোন দেশে একবার রিফিউজ হলে পরবর্তীতে আপনি যোগ্য হলেও সেই দেশ আর ভিসা দিতে চায়না। তবে আপনাকে আরো একটি কথা মাথায় রাখতে হবে আপনি যদি খুবই যোগ্য কিংবা কোন সুপারস্টারও হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রেও আপনি ৮০% এর বেশী ভিসার আশা করতে পারবেন না। পরিবেশ পরিস্থিতি আর আপনার কোন প্রকার ভুলের কারনেও রিফিউজ হতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here